জীবন কাহিনী
প্রকৌঃ মাহমুদ আলম
(চাইল্ডহুড এন্ড বয়হুড)।

সংক্ষিপ্ত নাম আলম। জন্মেছিলাম উচ্চু মধ্যবিত্য পরিবারে।  প্রচন্ড প্রাচুর্য্যের, বিত্তের, বৈভবের না থাকলেও দারিদ্রতা তাকে কখনও ছুতে পারেনি। অথচ তিনি-ই এক সময় জীবনে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। মুসলিম পরিবারে জন্ম হয়েছিল আমার। শৈশবে যথারীতি ওই ধর্মমতেদ দীক্ষিতও হয়েছিলাম। আমার সারা শৈশব কৈশোর কেটেছে এরই অনুশাসনে। যখন কলেজের পাঠ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে পা রাখবো, তখন মনে হল যে ধর্মমত, যে শিক্ষা আমাকে শেখানো হয়েছে তার মধ্যে আস্থা রাখার মত কিছুই নেই। মনে অনেক প্রশ œ? কেন বাঁচবো, কেন ভালবাসবো? কেনই-বা কাজের মধ্যে ডুবে থাকবো ? উত্তর খুজলাম দর্শনের পৃষ্ঠায়, বড়দের কাছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসের কাছে বিবেক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিন্তু উত্তর পেলাম না।

জীবনকে যদি মানব কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে না পারি, মানুষকে উপকার করতে না পারি তবে তার মূল্য কোথায় ? কি লাভ বেঁচে থেকে ? মনের মধ্যে শুধুই দ্বন্দ্ব। তাই শেষ পর্যন্ত নিজের গন্ডি ছেড়ে বেড়িয়ে পরলাম, বৃহত্তর জীবনের সন্ধানে। সাধারাণ মানুষের সঙ্গে মিশিয়ে, সূর্যের আলোর মতো পৃথিবীর কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেবো। তাই প্রকৌশল বিজ্ঞানের উপর আস্থা এলো। প্রকৌশল বিজ্ঞান দিয়েই সম্ভব বৃহত্তর মানব জাতিকে কল্যাণ করা। ফিরে পেলাম বিশ্বাস।
বাবা মায়ের  ৪র্থ পূত্র আমি। বাবা ডাঃ মো: আব্দুল বারী। তিনি সারা জীবন মানব কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। পারিবারিক জমিদারীও ছিল প্রচুর। সেনবাহিনীতে কাজ করতেন পাকিস্তানে। সেখানেই আমার জন্ম। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর, দেশ বিভক্তের পরই স-পরিবারে চলে এলাম বাংলাদেশে। প্রচন্ড আদর্শবান ব্যক্তি তিনি। মা মহাসিন-আরা-বেগম। মা তার নিজের যুগে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতা ছিলেন। বাংলা ছাড়া আরও তিনটি ভাষা জানতেন: উর্দূ, হিন্দি এবং ইংরেজী। মুখে মুখে গল্প তৈরী করার জুড়ি ছিল না তার। আমরা বড় হতে লাগলাম তারই ছত্র-ছায়ায়। মা আমাকে খুবই স্নেহ কতেন। আগলে রাখতেন সব সময়। এখানেই একদিন ভাল লেগে যায় রাশু নামের একটি মেয়েকে। সে আমার খেলার সঙ্গিনী। উভয় এরই বয়স তখন ১২। কোথায় দিয়ে সময় কেটে যায় খেয়াল থাকে না। খুব সুন্দরও। কিন্তু কোন দিনও তাকে সাহস করে বলা হয় নি।

আমি তখন ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। একদিন বসন্তের কাক ডাকা ভোরে আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন বেলগাছি থেকে ছোট ফুফু ও তাহার অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে “নাজমা” ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। এক গুচ্ছ কালো চুল তাহার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছাড়িয়ে। মুখে মিষ্টি হাসির ফোয়ারা যেন এক চঞ্চল প্রজাপ্রতির মতো। বেশ কিছুদিন ভালই কাটলো। বাড়ী যাওয়ার দিন সে শুধু একটি কথা বললো “ভাইয়া তুমি খুব সুন্দর। তোমাকে ভুলে যাওয়া সত্যিই খুব কঠিন”। আমি বললাম শুধু এইটুকুই। এর বেশী কিছু নাই?
সে শুধু হেসেই চলে গেল।
১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সকাল, স্কুলের পাঠ শেষ করে বেড়াতে এলাম খালা বাড়ী কামারখালীতে। এখানেই এক দুর সম্বর্কের বোনকে দেখে মুগ্ধ হলাম। তার নাম নীনা। নীনার মাথায় চুল পশমের মত নরম যেন তুলি দিয়ে আকা দুটি চোখ। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম: নীনাকে নিয়ে ছোট একটি ঘরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। নীনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনের মধ্যে নেশা ধরে যায়। একটু চোখের আড়াল হলে অস্থির হয়ে উঠতাম। কিন্তু প্রচন্ড লাজুক ছিলাম। তাই মুখ ফুটে সব কথা বলা সম্ভব্য নয়। শুধু বললাম নীনা তুমি কি সুন্দরী। তাই নাকি? বলে হাসতে হাসতে ছুটে চলে যায় সে। একটি রাত্রে, খালাতো ভাই অনু জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি নীনাকে ভালবাস ? নীচু গলায় জবাব দিই        – দারুন ভাবে ভালবাসি। কি রকম ?
আমি ওকে সর্বক্ষণ দেখতে চাই। ওর কথা শুনতে চাই- শুধু এইটুকু।
হেসে ওঠেন অনু। আমি হলে প্রথম চুমু খেতাম আঙ্গুলে, শিউরে ওঠে সমস্ত শরীর। চুপ হয়ে যাই।